সোমবার, মে ২০, ২০২৪
spot_img

আনন্দ আয়োজনের রাত এক লহমার আগুনে যেন মৃত্যুপুরী

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন তল্লাশি শেষ করে একে একে নেমে আসছিলেন রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে, তখনও আগুনে পোড়া ভবনটির সামনে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কয়েক ঘণ্টা আগেও বেইলি রোডের যে জায়গা ছিল জমজমাট এক আনন্দ আয়োজনের উৎসব স্থল সেখানে কারও মুখে কোনো কথা নেই। টুকরো টুকরো জটলায় কান পাতলেই শোনা যায়, এক আগুনে কী হয়ে গেল। 

সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের এ অংশের খাবার দোকানগুলোতে বরাবরই ভিড় থাকে। এদিন রাতও ছিল অন্য এক রাতের মতই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর খাবারের স্বাদ নিতে কিংবা স্বজনদের সঙ্গে খাবার আনন্দ ভাগ করতে তারা এসেছিলেন ছোট ছোট দলে। সেই আনন্দ আয়োজন এক আগুনে পরিণত হয় বিষাদপুরীতে।

রাত পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আগুনে শুরু হয় ছুটোছুটি। চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায় আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে। পথচারী আর আশপাশের দোকান ও ভবন থেকে মানুষ ভিড় করতে শুরু করে আগুন লাগা আটতলা গ্রিন কোজি কটেজ ঘিরে।

নিচ থেকে আগুন উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা মানুষের বের হওয়ার কঠিন হয়ে পড়ে। এলোমেলো ছু্টোছুটি শেষে সবাই গিয়ে জড়ো হতে থাকেন উপরের দিকে। এক পর্যায়ে নিচ থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে সবাই ভিড় করেন ছাদে।

এরমধ্যেই ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের একের পর এক ইউনিট। এগুলোর কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আটকা ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। শুরুতে আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে আহত ৫ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর খবর আসে। পরে আহত ও আগুনে দগ্ধ সেই সংখ্যা ১৫ হয়ে ৫০ ছাড়ায়। 

আগুন নেভানোর মধ্যেই নারী ও শিশুসহ জীবিত ৭৫ জনকে উদ্ধার করা হয়। ছাদে জড়ো হওয়াদের মধ্যে অচেতন অবস্থায় ৪২ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর তথ্য দেয় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভানোর আগে প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য আসে। এরপরই মৃতের সংখ্যা বেড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আসতে থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর। প্রথম তিনজন এরপর তা বেড়ে ১১ এবং ২০ জনের খবর আসে হাসপাতাল থেকে। শেষমেষ রাতে ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। 

দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর রাত ১২টা ১০ মিনিটে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের তথ্য দেয় ফায়ার সার্ভিস। এরপর গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটির আটতলার সব জায়গা তল্লাশি শেষে রাত ১টা ৫৫ মিনিটে রাতের মতো উদ্ধার অভিযান শেষের কথা জানানো হয় বাহিনীর পক্ষ থেকে।

আগুনে পুরো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দৃশ্য রাতের অন্ধকারেও টের পাওয়া যাচ্ছিল বাইরে থেকে। সবগুলো কাচ ভাঙা। রাত ৩টার দিকেও পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা পুরো ভবন ঘিরে রেখেছেন। ভবনটির দোতলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান কাচ্চি ভাই এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান। নিচ তলায় স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফি শপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন একে একে রাত ২টার দিকে বেরিয়ে আসছিলেন তখনও অনেকে ভবনটির সামনে ভিড় করেছিলেন। তাদেরই একজন সোহেল আকবর। রাত ৯টা ৫০ এর দিকে যখন আগুন লাগে তখন কাচ্চি ভাই থেকে খাবার কিনতে সেদিকে যাচ্ছিলেন। লাইন লম্বা থাকায় ভবনের আগেই অপেক্ষায় ছিলেন। এরপরই আগুনের খবরে ছুটোছুটি শুরু হয়। তারও আর ঢোকা হয়নি ভবনে। 

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে চুলা বা গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে ধারণার কথা বলেছেন। ভবনটির প্রতিটি ফ্লোরেই গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল বলেও জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়া জেনারেল মঈন উদ্দিন। 

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর