বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
spot_img

নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে ননী ফল চাষ

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে ননী ফল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নড়াইলের উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম (৪২)। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ফল ও চারা ক্রয় করতে রবিউলের বাগানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে যোগান সীমিত হওয়ায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

রবিউলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল থেকে জানান, সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের ধাড়ীয়াঘাটা গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে রবিউল ইসলাম নিজ বাড়ির পাশের ১৫ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ঔষধি গুণসম্পন্ন ননী ফলের বাগান। এছাড়া পাশের ২০ শতকের আরেকটি জমিতেও চলছে বাগান করার প্রস্তুতি। বর্তমানে আফ্রিকান, ইন্ডিয়ান ও মালয়েশিয়ান জাতের প্রায় দুই শত ননী ফল গাছে সমৃদ্ধ রবিউলের বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা ননী ফল। এছাড়া তার কাছে ননী ফল ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছের কয়েক হাজার চারা রয়েছে। দামি এই ফল ও চারা কিনতে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত তার বাগানে ভিড় করছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরিয়ারের মাধ্যমে চারা ও ফল পৌঁছে দিচ্ছেন রবিউল।


উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম জানান, তিনি এসিআই কৃষি প্রজেক্টে যশোরে চাকরি করেন। সেই সুবাধে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষেক তিনি কৃষি বিষয়ে যুক্তি-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একবার তিনি ভারতে গিয়ে ননী ফলের বিশাল বড় বড় প্রজেক্ট দেখেন এবং জানতে পারেন এটি ক্যান্সারের প্রতিষেধক। এরপর ২০২১ সালে ভারত থেকে চারা এনে বাগান গড়ে তোলেন। প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে বাগানটি করার পর থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছেন। তিনি ২০২২ সালে গাছ থেকে প্রথম ফল পান। সে বছর প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন। এবছর ইতোমধ্যে ৫-৬ মণ ফল বিক্রি করছেন। এর আগে ফল ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। শীত মৌসুমে ফলের দাম আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। তিনি আশা করছেন এবার প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে এ বাগানে আর খরচ নেই। শুধু সার আর ওষুধে হয়তো হাজার দুয়েক টাকা খরচ হবে বছরে। তাছাড়া আর এক টাকাও ইনভেস্ট করা লাগবে না। ২০ বছর পর্যন্ত আর কোন ইনভেস্ট ছাড়াই ইনকাম করতে পারব। এ বছর ৮-১০ লাখ টাকা আয় হলে সামনে বছর ১৫ লাখ টাকা হবে। গাছ যত বৃদ্ধি পাবে, ফলও বাড়বে। ফলের দামও বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, তার বাগানে থাকা আফ্রিকান ননী ফলটা ক্যান্সারের মহৌষধ। ভারতীয়টা ব্যাথা এবং রুচি বাড়াতে সক্ষম। আর মালয়েশিয়ানটাও ক্যান্সারে কাজ করে তবে সেই ফলের সাইজ কিছুটা ছোট।


নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তে যে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করব। তারা যাতে লাভবান হন সেজন্য সহযোগিতা করব। এটা তো একটা ব্যবসা। মানুষের উপকার হবে, ব্যবসাও হবে। ক্যান্সারের কোনো ওষুধ বাংলাদেশে ছিল না। এই ওষুধ খেয়ে শত শত রোগী ভালো হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য ফল চাষে তেমন লাভ নেই। কিন্ত এই ননী ফল চাষে বর্তমান প্রচুর লাভ।


এদিকে রবিউলের বাগানের ননী ফল কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শরশুনা গ্রামের তৈয়ব আলী বলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত আমার এক আত্মীয় কিছুটা শুনে আমিও ফল কিনতে এসেছি। আল্লাহ যদি চান তাহলে ভালো হব। আল-আমিন নামে এক যুবক বলেন, তার ছোট বোনোর ক্যান্সার হয়েছিল। ঢাকা নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরত দেন। পরে এখান থেকে ননী ফল ও করসলের পাতা নিয়ে খাওয়ার পর অনেকটা সুস্থ হয়েছে। নড়াইল শহরের আলাদাতপুর থেকে আসা মোহাম্মদ ইরব মোল্যা বলেন, এখানে অনেক ঔষধি গাছ আছে শুনে এসেছি। তার একজন রোগী আছে তার জন্য গাছ, পাতা ও ফল নেব।


মাইজপাড়া ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শোভন সরদার, এ প্রতিবেদক উজ্জ্বল রায়কে বলেন, বাণিজ্যিকভাবে নড়াইলে এখানেই প্রথম ননী ফলের চাষ হচ্ছে। এই গাছের চারা একবার রোপণের পর ২০ বছর ফল পাওয়া যায়। এটা অত্যন্ত লাভজনক। রবিউলের বাগানের প্রচার দেখে অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন। নতুন উদ্যেক্তাদের সার্বিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর