বুধবার, মে ২২, ২০২৪
spot_img

জবি ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ছিনতাই ও মারধরের অভিযোগ

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ১নং সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন অনি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয়ের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে তার কাছ থেকে ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী ফয়সাল ওরফে হেলাল বাদামতলী এলাকার ফল ব্যবসায়ী। তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলার মৃত শাহ আলমের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার বাংলা বাজারের কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের ১নং সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন অনি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয়সহ ৬ জন ঐ ব্যবসায়ীর পথ রোধ করে তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা নগদ ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় অভিযুক্তরা। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পাশের এক রেস্তোরায় প্রবেশ করেন ভুক্তভোগী হেলাল। এরপর মহিউদ্দিন অনি ও হাসিবুল হাসান হৃদয় সেই রেস্তোরায় প্রবেশ করে তাকে পুনরায় চড়-থাপ্পর শুরু করেন এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা কারোকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

তবে আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় উক্ত ঘটনায় সূত্রাপুর থানা পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে ভুক্তভোগী ফয়সাল ওরফে হেলাল আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজ্য মহল কাচ্চি বিরিয়ানি হাউজ নামের সেই রেস্তোরার ভেতরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মহিউদ্দিন অনি ও হাসিবুল হাসান হৃদয় ওই ব্যক্তির সাথে আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে মহিউদ্দিন অনি উত্তেজিত হয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় শুরু করেন। এরপর রেস্তোরার কর্মীরা হেলালকে রক্ষা করতে আসলে তারা আরও মারমুখী হয়।

রাজ্য মহল কাচ্চি বিরিয়ানি হাউজ নামের সেই রেস্তোরার মালিক মিন্টু শেখ বলেন, গত শুক্রবার রাতে একজন আশ্রয় চেয়ে আমার দোকানে প্রবেশ করেন। আমরা ঐ ব্যক্তিকে ভেতরে আসতে দিলে তার পিছু পিছু দৌড়ে আরও ২ জন দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে হেলালকে (পরে নাম জানতে পারি) চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন একজন। আমরা বাঁধা দিতে গেলে দোকান-পাট ভাঙচুরের হুমকি দেন। পরে আমরা তাদেরকে অনুরোধ করলে তারা চলে যায়।

ভুক্তভোগী ফয়সাল ওরফে হেলাল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন অনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হৃদয়ের নেতৃত্বে ৬ জন আমার উপর অতর্কিত আক্রমন করে। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় আমি পুরোনো টাকা কালেকশন করতে সদরঘাট এলাকায় ছিলাম। ফোনে কথা বলতে বলতে আমি জুবিলী স্কুলের সামনে চলে যাই। সেখানে তারা বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় হৃদয় আমাকে দেখতে পায়। সে অনিকে আমার কথা বললে অনি বলে ওরে ধরে ওর পকেটে কত টাকা আছে দেখ। তারা এসেই আমাকে মারধর শুরু করেন। তখন আমার সাথে প্রায় দুই লাখ ছয়ত্রিশ হাজারের মতো টাকা ছিলো। মারধর করতে করতে তারা আমার পকেট থেকে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনায়ে নেয়। বাকি টাকা আমার মানিব্যাগে থাকায় তা আর নিতে পারে নাই। টাকা নেয়ার পর তারা আমার ওয়ান প্লাস মোবাইলকে আইফোন ভেবে কেড়ে নিতে চাইলে আমি তাদের থেকে ছুটকাড়া পেয়ে দৌঁড়ে পাশের এক হোটেলে যাই। হোটেলের মধ্যেও অনি আমারে মারধর করে। একপর্যায়ে হোটেলে থাকা লোকজন আমাকে রক্ষা করে।

ভুক্তভোগী হেলাল আরও বলেন, গতকাল রাতে বাইকে করে ৩ জন ব্যক্তি আমাকে ফলো করতে করতে ওয়ারী পর্যন্ত আসে। তারা আমারে ইশারায় ডাকতে থাকে এবং বলে আমার সাথে কথা আছে। আমি তাদেরকে দেখে রিকশা করে দ্রুত চলে যাওয়ায় চেষ্টা করি। আমি সাড়া না দেওয়ায় আমাকে মারধরের হুমকি দেয় তারা।

পুলিশের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ঘটনার পর রাত সোয়া ১২ টায় মামলা করার জন্য সূত্রাপুর থানায় যাই। পুলিশ আমার মামলা নেয়নি। তারা আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে ফেলতে বলে। আমি অস্বীকৃতি জানালে অনি পুলিশকে বলে আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য তার কাছে ছেড়ে দিতে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত জবি ছাত্রলীগের ১ নং সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন অনি ছিনতাইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হেলাল নামের ওই ব্যবসায়ীর সাথে আমার অনেক আগে থেকেই পরিচয়। সময় দিম রাতে তার সাথে আমার দেখা হলে আমি তাকে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু সে হুট করেই আমাকে চোর, সন্ত্রাস, ছিনতাইকারী বলে গালিগালাজ শুরু করে। তখন আমার সাথে থাকা জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয় এবং আরেক ছোটভাইকে বলি যে সে মদ্যপ কিনা দেখতে। তখন সে দৌঁড়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে। পরে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওখানে পুলিশই উপস্থিত ছিল। পরেরদিন থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে দুইজন দুইজনকে সরি বলে ঘটনার মীমাংসাও হয়েছিল। এখন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কালি লাগানোর জন্য এসব অভিযোগ তুলা হচ্ছে।

এবিষয়ে কথা বলতে আরেক অভিযুক্ত জবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হাসান হৃদয়কে বারবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি

এবিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম ফরাজি বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। এধরণের কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ কখনোই প্রশ্রয় দিবেনা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ওসি মো. মাসুদ আলম বলেন, এমন ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমাদের কাছে কোন ধরনের অভিযোগ আসেনি। আমরা এ বিষয়ে অবগত না। সংশ্লিষ্ট যারা দেখেছে তারা বলতে পারবে।

এসএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর