কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষমতা দেখিয়ে একই বিভাগের দুই শিক্ষকের সাথে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছিল। তবে রেজিস্ট্রার বলছেন অফিস সহকারী আবুল কাশেমও অভিযোগ দিয়েছে একই ঘটনায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষকদের দাবি সাবেক বিভাগীয় প্রধান সুতপা চৌধুরী বিভাগের একাডেমিক মিটিংয়ের রেজুলেশন ছাড়াই নামমাত্র একটি চিঠি রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়েছেন এবং আবুল কাশেমকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
অভিযুক্ত অফিস সহকারী হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের অফিস সহকারী আবুল কাশেম।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা হলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলা-আমীন ও ফাহাদ জিয়া।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শিশু দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। উক্ত মেডিক্যাল ক্যাম্পের আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাহাদ জিয়া। তিনি সেদিন আবুল কাশেমকে একজন ছাত্র দ্বারা ফোন করিয়ে কিছু জিনিস ঘটনাস্থলে দিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সে সময় কাশেম সেখানে উপস্থিত ছিল না। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে ফাহাদ জিয়ার সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সে সময় আবুল কাশেম ফাহাদ জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার কিছুর দরকার হলে আপনি আমাকে ফোন দিবেন। ছাত্রকে দিয়ে ফোন দেয়ান কেন? মোবাইলে টাকা না থাকলে আমাকে বলবেন, আমি রিচার্জ করে দিব।’
এই আচরণ প্রসঙ্গে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সুতপা চৌধুরীকে অবহিত করা হলে গত ১৮ মার্চ ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের জরুরি একাডেমিক মিটিংয়ে তাকে তলব করা হয় এবং ১৭ মার্চের ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়। ঘটনার বর্ণনাকালে আবুল কাশেম মিথ্যা বলছে এমন দাবি করেন। তখন আবুল কাশেম সহকারী অধ্যাপক মো. আলামিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি লোকাল পোলা, আমার সাথে লাগতে আসলে আমি কলা গাছের মতো শিকড় উপড়ে ফেলমু।’
গত ১৮ মার্চে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সভায় উপস্থিত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আবুল কাশেম একাডেমিক সভায় উপস্থিত সকলের সামনেই এলাকার পাওয়ার দেখিয়ে আলামিন স্যারকে হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনা প্রতিটা শিক্ষকের জন্যই আপমানজনক।’
একাডেমিক সভায় উপস্থিত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক আকিলা জাহান বলেন, ‘আমাদের সকলের সামনেই আলামিন স্যারকে আবুল কাশেম হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনায় আমরা হতবম্ব হয়ে পড়ি। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাহাদ জিয়া বলেন, ‘১৭ই মার্চ কাশেম আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন এবং বিগত কয়েকদিন যাবত তিনি সেটা করেই যাচ্ছেন। তারপর তাকে একাডেমিক সভায় এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রথম থেকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আমাদের সাথে মিথ্যা কথা বলছিলেন। আলামিন স্যার তার কথার প্রতিবাদ করলে কাশেম স্থানীয় ক্ষমতা দেখায় এবং শিকড় উপরে ফেলার হুমকি দেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিলাম এই কথা শুনার পরে। আমাদের সকল সিদ্ধান্ত হয় যে এই একাডেমিক সভার রেজুলেশন রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো হবে কিন্ত তখনকার চেয়ারম্যান সুতপা ম্যাম তা না করে একটা ফরোয়ার্ডিং লেটার রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠিয়ে দেয়।’
এই ব্যাপারে ভুক্তভোগী ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আল-আমিন বলেন, ‘এর আগেও সে আমার সাথে আজেবাজে কথা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে। এর জন্য তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করাও হয়েছে। অফিস সহকারী আবুল কাশেমের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও হুমকি প্রদান বিষয়ে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায়, একজন শিক্ষক হিসেবে বিভাগে কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমি খুবই অনিরাপদ এবং অপমানিতবোধ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাছাড়া গত ১৮ই মার্চ যখন মিটিংয়ে বিভাগের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন, তখন সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে আমাকে যে কথাগুলো বলে আবুল কাশেম হুমকি দিয়েছিল সেটা উল্লেখ করে মিটিং রেজোলিউশন সবার কাছে স্বক্ষরপূর্বক একটি ফরোয়ার্ডিং তৈরি করে রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে সুতপা চৌধুরী ম্যাম মিটিংয়ে রেজুলেশন তৈরি করেননি, তড়িঘড়ি করে একটি ফরওয়ার্ডিং রেডি করে আমাদের কাউকে অবহিত না করে রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠিয়ে দেন। আমি মনে করি সুতপা চৌধুরী ম্যাম আবুল কাশেমকে ব্যক্তিগতভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন ও প্যাট্রনাইজ করছেন, যা উনি সবসময়ই ও আগে থেকেই করে থাকেন ব্যক্তিগত কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্য।’
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের অফিস সহকারী আবুল কাশেম বলেন, আমি এমন কিছু বলিনি। সেদিন স্যারের সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে সেটা পরে সমাধান হয়েছে।
কী ঝামেলা হয়েছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মা অসুস্থ, আমার মাথা ঠিক ছিলো না।
এই অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক বিভাগীয় প্রধান সুতপা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি ফোন ধরে কথা বুঝতেছেন না বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন জয়েন করেছি। একাডেমিক সভার রেজুলেশন সবার কাছে স্বাক্ষরপূর্বক একটি ফরওয়ার্ডিং তৈরি করে রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অনেক আগে অভিযোগ দেয়া হয়েছে এই ঘটনায়। আবুল কাশেমও সম্ভবত একটি অভিযোগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ আছে।