রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগেই আয়ানের মৃত্যু হয়েছে- এমন অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাজমুল হাসান। নইলে ইউনাইটেড হাসপাতাল ঘেরাও করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির পক্ষে এ ঘোষণা দেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, আয়ানের এ অপমৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যতা প্রকাশ পেয়েছে। আয়ানের জায়গায় আজ আমি, আপনি, আমাদের পরিবারের যে কেউ থাকতে পারতো। তিনি আরও বলেন, গত বছর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ইডেন কলেজের এক বোন ও তার বাচ্চার মৃত্যু হয়। সে ঘটনায়ও কাঙ্ক্ষিত কোনো বিচার আমরা পাইনি।
আয়ানের চাচা মো. মানিক বলেন, আয়ানকে হারিয়ে আমাদের বুক যেভাবে খালি হয়েছে, আর কারও যেন না হয়। ধারণা করেছিলাম আয়ানের মৃত্যু আরও আগেই হয়েছে কিন্তু তারা সেটা প্রকাশ করেনি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন তারা সেটা প্রকাশ করে যাতে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যায়। এরপর তারা ৬ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। সেখানে অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই তাকে ফুল অ্যানেস্থেশিয়া (জেনারেল) দিয়ে সুন্নতে খাতনা করান চিকিৎসক। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাতদিন পর গত রাতে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে বাড্ডা থানায় অভিযোগ করেছে আয়ানের পরিবার। তাদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকার। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন বাবা শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, এতদিন তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করছিল। শেষে নির্বাচনের দিনকে টার্গেট করা হয়, যাতে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে কম প্রচার পায়।
তবে অভিযোগ এড়িয়ে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের ওপর। গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের নন-মেডিকেল ডিউটি ম্যানেজার সানাউল্লাহ কবির বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবস্থপানাসহ পুরো প্রক্রিয়াতেই দুই প্রতিষ্ঠান আলাদা।এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এস আই আর