বুধবার, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
spot_img

কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারি চাকরি থেকে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এর পরেই সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।তাই কোটা নিয়ে আমরা জানতে চাই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত, যা তুলে ধরছেন ‘জনতার বার্তা’ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কামরুল হাসান।

‘কোটা ব্যবস্থা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর জবরদস্তিমূলক ‘

কোটার মূল ফিলোসফিটা দুনিয়ার সকল জায়গায়ই এরকম যে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমান সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদার সিঁড়িতে ওপরে ওঠার ব্যবস্থা করে দেয়া। এখন আমরা যদি আজকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর কথা বলি (এইটাকে সাইডে রেখেই যে অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটধারী আছে, আর অনেক মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটই নাই), তাইলে দেখা যাবে সরকার তাঁদের বাড়ি-ভাতা সহ নানাভাবে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে এবং তাঁরা এটার যোগ্য দাবীদারও। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা বর্গ হিসেবে পিছিয়ে পড়া বলার সুযোগ নেই। ১৫-২০ বছর আগে হয়তো সেরকম পরিস্থিতি ছিলো, কিন্তু এখন আর তা না। কাজেই আজকের দিনে দাঁড়ায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাঁদের পরবর্তী ২-৩ পুরুষের জন্য ৩০℅ কোটার কোনো অর্থই নাই। এই পুরো সিদ্ধান্তটাই মারাত্মক লাগামহীনভাবে রাজনৈতিক। এটা ৫-১০% হলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে মানা যেত, কিন্তু এখন এটা পুরোটাই একটা জবরদস্তিমূলক সিদ্ধান্ত।

মুনেম আল আজাদ
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করা হোক ‘


চলমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের (প্রত্যয়) বিরোধিতা করে আন্দোলনের মাঝেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে প্রায় দীর্ঘ ৬ বছর পর আবারও সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। একদিকে শিক্ষকরা অন্যদিকে কোটা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে । এতে করে বিঘ্নিত হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম । স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করা হয়েছিল বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য, তবে দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও বৈষম্য রয়ে গেছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবরকম কোটা মিলিয়ে মোট ২৫৮ ধরনের কোটা চালু আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে নিজেদের মেলে ধরা ও প্রমাণ করার বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্য একে বড় হুমকি মনে করছেন। কোটার সিংহভাগই বরাদ্দ আছে (৩০% করে) মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীদের জন্য বিসিএস, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন ক্যাডার পদ এবং প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে। অন্যদিকে, নারীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেটি রোধ করতে তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়তি সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করছেন না সরকার। যেমন, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি রয়েছে ৬০% নারী কোটা। এছাড়া আরও ৬% অন্যান্য কোটা। কোটা সুবিধার পাশাপাশি যেকোনো পদে কতটুকু যোগ্য লোক নিয়োগ পাচ্ছে সেটাও খুব খেয়াল রাখবার একটি বিষয়। অন্যথায়, যোগ্য লোকের পদচারণার অভাবে দেশের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের বিরাট ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। সরকার ও নীতিনির্ধারকরা কোটা বাতিলের পক্ষপাতী না হলেও কোটা সীমিত করার পদক্ষেপকেও সাধুবাদ জানানো হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কোটা রাখার বিষয়টিকে সমর্থনযোগ্য। কোটা সংস্কার বা সীমিত করার আন্দোলনের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আমি আমার একাত্মতা পোষণ করছি।

আব্দুল্লাহ আল মামুন
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


‘কোটা সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্য ‘

একুশ শতাব্দীতে এসে আমাদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে আমরা সবদিক দিয়ে আধুনিক হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের চিন্তাগুলো এখনো সেকেলে রয়ে গেছে।কোটাপ্রথা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হওয়া উচিত মুক্তিযোদ্ধা কোটা,নারী কোটা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতি কোটা সবগুলো। ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্য। কেননা মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধররা কোনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী না, তারাও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতো সবদিক দিয়ে সমান সুবিধা প্রাপ্ত। তাছাড়া কোটা দেয়া হলে এতে অনেক নিম্নযোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থী চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া তারা এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সহজে পেয়ে গেলে এর মাহাত্ম্য বা তাৎপর্য বুঝবে না। বর্তমান সময়ে গনমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বেশ কিছু ভুয়া সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কোনোভাবেই এরকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া মানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বড় অপমান করা। আমি মনে করি যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তারাও চাইবে না সাধারণ জনগনের সাথে এরকম বৈষম্য হোক, যেহেতু তারা নিজেরাই পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতি দের কোটা সুবিধা দেয়া মানে তাদের অন্যদের মতো সমান অধিকার আদায় করা হয় না। তাদেরকে সাধারণ নাগরিকদের দের মতো শিক্ষিত হওয়ার এবং পড়ালেখা করার সুযোগ দিতে হবে যাতে তারা সমান যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে উঠে ও সমান ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

আখলাক আহমেদ জিহাদ
শিক্ষার্থী, নেভাল আর্কিটেকচার এন্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

‘কোটার অংশ মেধাবীদের চেয়ে বেশি নয়’

২০১৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়। কিন্তু ছয় বছর পর আবার সেই কোটা পুনর্বহাল মেধাবীদের জন্য অশনিসংকেত। যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ১০০ তে ৯০ পেয়েও চাকরি পাওয়া নিয়ে সংশয় সেখানে একজন কোটাধারী ৫০ পেয়েই চাকরি পেয়ে যাবে। এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন মেধা বৈষম্য সৃষ্টি করছে তেমনি রাষ্ট্র হারাবে দক্ষ জনশক্তি। বর্তমান

সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি – নাতনিরা কোন অংশেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন ভাতা ও সুযোগ – সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে কোটা সুবিধা গ্রহণ করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অমর্যাদার । আর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটার অংশ মেধাবীদের চেয়ে বেশি হওয়া কখনোই উচিত নয়।

আল-শাহারিয়া আলী
শিক্ষার্থী, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

কামরুল হাসান/এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর