বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪
spot_img

ওরা পালালে দুদকের তদন্ত বাড়ে?

দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে তা আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত পুরোদমে শুরু করার আগেই কিভাবে ‘অভিযুক্তরা’ দেশ ছাড়ে?

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, “বিষয়টা এমন না। দুদক চাইলেই কিছু করতে পারে না। এক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় ও আইন অনুযায়ি দুদককে ব্যবস্থা নিতে হয়। কোনো পত্রিকায় কোনো খবর প্রচার হলে সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, কিন্তু সেটার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। দুদক কমিশনকে ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হয়। এরপর উদ্যোগ নিতে হয়। যেমন রবিবার রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। পরদিন, অর্থাৎ, সোমবারই আদালত থেকে তার ও স্ত্রী সন্তানের বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।” 

পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে ৩১ মার্চ। তার অনেক পরে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশ ছাড়েন তিনি৷ এত সময পাওয়ার পরও কেন তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি? এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, “পত্রিকায় খবর হলেই তো দুদক ব্যবস্থা নিতে পারে না। এগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতে তো একটু সময় লাগতেই পারে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে দুদককে তো এইটুকু সময় দিতেই হবে। দুদক তো আইনের বাইরে গিয়ে কারো বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করতে পারে না। অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ফলে যাদের শাস্তি হবে, তাদের তো দেশে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব। আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই।”

সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেখানে তিনি বলেন, “কিছু মানুষের টাকা-পয়সা এত বেড়ে যায় যে তারা দেশে টাকা রাখতে পারে না। কিছু মানুষ লোভী হয়ে যায়। টাকা-পয়সা এত বেড়ে যায় যে দেশ বাদে বিদেশে রাখতে গিয়ে তারপর দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেললো যে দেশেই থাকা যায় না। তাহলে লাভ হলো কী! এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। নেশার মতো হয়ে যায়।”

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালে পি কে হালদার (প্রশান্ত কুমার হালদার) এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। দুদকের তদন্ত শুরুর কয়েকদিন আগেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। পরে সেখানরই তিনি গ্রেপ্তার হন, সেখানে তার বিচার চলছে। কিন্তু তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে দেশে তদন্তেও ভাটা পড়ে। একইভাবে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ দেশ ছাড়ার পর তদন্তের উদ্যোগ নেয় দুদক। সর্বশেষ আলোচনায় আসা রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে আলোচনা হচ্ছে। যদিও এখনও নিশ্চিত কোনো সূত্র তার দেশত্যাগের কোন তথ্য দেয়নি। সূত্রগুলো বলছে, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তিনি দেশ ছেড়েছেন। এর আগেই তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে বিদেশে চলে গেছে।

সরকার বা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ছাড়া কি কারো পক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব? সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “ভেতর থেকে কোনো তথ্য তারা না পেলে বা সহযোগিতা ছাড়া কারও পক্ষেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু কারও অনুপস্থিতিতেও বিচারের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে বরং যিনি পালিয়ে গেলেন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন। অনুপস্থিতিতে বিচার এদেশে অনেক মানুষের হয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কারো কারো বিচার অনুপস্থিতিতে হয়েছে। তারা ধরা পড়লে তাদের সেই দণ্ড কার্যকর হবে। বিচারে কারো শাস্তি হলে তিনি ধরা পড়ার পর সেই শাস্তি কার্যকর হবে। তবে হ্যাঁ, কারো উপস্থিতিতে বিচার হলে একটা দৃষ্টান্ত হতো। কিন্তু যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময়চুক্তি আছে, সেইসব দেশে তারা থাকলে তাদের তো ফিরিয়ে আনাও সম্ভব। এখন তাদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চাইলেই তো কারও বিদেশ যাত্রা বন্ধ করা যায় না। তার জন্য কিছু আইনগত প্রক্রিয়া আছে। শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বের সবদেশেই আইনি প্রক্রিয়া মানলে যতক্ষণ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ তার বিদেশ যাত্রা বন্ধ করা যাবে না। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখছি, বেশ কিছু আলোচিত ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, যখন তাদের অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমেও তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট ছাপা হচ্ছে। যেসব ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্রুত ব্যবস্থা নিতো তাহলে তারা হয়তো পালিয়ে যেতে পারতো না। এমন ঘটনাও কিন্তু বিরল নয় যে, যাদের বিদেশ যাত্রায় কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই তাদের বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হওয়ার কারণে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে তৎপরতা বাড়াতে পারে বলে আমি মনে করি।”

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর