গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকে বড় জমায়েত করেছিল বিএনপি। তবে সেদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে বেশি সময় টিকতে পারেনি লাখো জনতা। এরপর থেকে বিএনপি অনেকটা চুপসে যায়। দলটির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা গ্রেফতার হন। অনেকে চলে যান আত্মগোপনে। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতেও তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি বিএনপির নেতাকর্মীদের।
টানা আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হয়ে যাওয়ার পরও আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত দুই দিন কালো পতাকা মিছিল করেছে দলটি। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে দলটির নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে।
২৮ অক্টোবরের পর যেসব নেতা আত্মগোপনে ছিলেন তাদেরও অনেককে দেখা যায় কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে। গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপি বিজয় র্যালি করলেও সেখানে উল্লেখযোগ্য নেতাদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। তিন মাসের মধ্যে আজই প্রথম অনেক নেতাকে দেখা গেছে কর্মসূচিতে। কেউ কেউ আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসেছেন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিএনপির মিছিলে আসামি পাওয়া গেলে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে দুই দিনের কর্মসূচি শেষে আগামী ৩০ জানুয়ারি সারাদেশে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। সেদিনও দলটি কালো পতাকা মিছিল করবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এর পরপর আওয়ামী লীগও ওইদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
শনিবারের কর্মসূচিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডেএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে দেখা গেছে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসময় বলেন, ‘এই নির্বাচনে মাত্র সাত শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের বাকি ৯৩ ভাগ মানুষ বিএনপির পক্ষে। সেটি এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় এই কর্মসূচি থেকে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি, সংসদ বাতিলের দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় গত সপ্তাহে। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ একসাথে এই কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি উপলক্ষে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মঞ্চ তৈরি করা হয়। এতে অংশ নিতে সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সবার হাতেই ছিল কালো পতাকা। কেউ কেউ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অংশ নেন সমাবেশে। দুপুর দুইটায় কর্মসূচির সময় থাকলেও বেলা ১২টা থেকেই প্রধান কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে অনেকেই জড়ো হতে থাকেন। শ্লোগান দেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে।
দুপুর দুইটার পরপরই কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল এলাকা পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মোনাজাতের মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপি। মিছিলটি নাইটেঙ্গেল মোড় হয়ে ফকিরাপুল-আরামবাগ মোড় ঘুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
তবে নির্বাচনের আগে গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি যেমন ছিল, তিন মাস পর এই কর্মসূচিতে সেই তুলনায় নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল কম।