বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
spot_img

আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বেহাল দশা: নজরদারির অভাবে যেন ভূতের বাড়ি

এ কে নোমান, নওগাঁ: নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসরে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর গবেষণার একটি আন্তর্জাতিক মানের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র সাত-আট বছরের ব্যবধানে এটিকে যেন পরিত্যক্ত ভৌতিক ভবনে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে চরম অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ গবেষণা ইনস্টিটিউটটি জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

প্রায় ৬.১০ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বকবির স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ ও গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। তবে দীর্ঘ কয়েক বছরে এখানে কোনো চুন-সুরকি কিংবা রং-বান্নির কাজ করা হয়নি। ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে, শ্যাওলা এবং শৈবালসহ বিভিন্ন আগাছা গজিয়ে উঠেছে, এমনকি কিছু জায়গায় গাছপালাও জন্ম নিয়েছে। ভেতরের পরিবেশে অন্ধকারে ভরা, যা দেখে মনে হয় যেন এটি একটি পরিত্যক্ত ভূতের বাড়ি। প্রতিষ্ঠানের মাঠজুড়ে খালখন্দ ও জলাবদ্ধতার কারণে এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, নেই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, বরাদ্দের অভাবে ইনস্টিটিউটের ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন এখানে অফিস কার্যক্রম চালানো এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা চরম কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তার কথায় উঠে আসে—এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে, কারণ সাত বছর ধরে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কোনো সরকারি বেতন-ভাতা এখনও তারা পাননি। তিনি আরও জানান, দেশ-বিদেশের পর্যটক ও মিডিয়া কর্মীরা এখানে আসেন। তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশ রাখার চেষ্টা করেন তিনি। তবে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের চেষ্টা শুধু অস্থায়ী সমাধান।

প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, প্রায় ১০০ জন কর্মচারীর প্রয়োজন থাকলেও এখানে বর্তমানে মাত্র ২৬ জন কর্মী আছেন, যারা সরকারি বেতন-ভাতা ছাড়াই কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে প্রায় ২০০টি গবেষণাপত্র এবং বই প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক জার্নাল। তবে পর্যাপ্ত প্রিন্টিং প্রেস ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে এই কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম, আন্তর্জাতিক মানের ডরমিটরি ও লাইব্রেরি আর্কাইভের অভাব রয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এলাকাবাসীর দাবি, আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটটি যেন আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হয় এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি রবীন্দ্র গবেষণায় সুনাম অর্জন করতে পারে। এই দাবির পাশাপাশি তারা আরও প্রস্তাব করেছেন যে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ” প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পতিসরকেই বিবেচনা করা উচিত।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা নওগাঁয় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। পরে, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ’ বিলটি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কর্তৃক সংসদে উত্থাপিত হয় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

স্থানীয়দের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি পতিসরে স্থাপিত না হয়, তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে এই আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটকে সংযুক্ত করা হোক। এতে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নত মানে পরিচালিত হবে এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত পতিসর আরও সমৃদ্ধ হবে। উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধারণ করা এই প্রতিষ্ঠানটিকে অচিরেই রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা উচিত।

/এমএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর