সোমবার, মে ২০, ২০২৪
spot_img

অপরাধ ঢাকতে নিজের স্বাক্ষর জাল বললেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

গুরুদাসপুর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো কাজ না করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ বিল ভাউচারটি হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানাজানি হলে অপরাধ ঢাকতে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষরিত নিজের স্বাক্ষর জাল বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম। এমনকি তার স্বাক্ষর জাল বলে বিষয়টি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত পিয়ন তুহিনের ওপর। এসব কারণে বিলটি বর্তমানে স্থগিত করেছে হিসাব রক্ষণ অফিস।

দাখিল করা বিল-ভাউচারে দেখা যায়- ২১ নম্বর টিআর ফরমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ‘ক্রয়, সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয়ের বিল’ দাখিল করা হয়েছে ৬৭ নম্বর ভাউচারে। সিংড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক এন্টার প্রাইজের স্বত্তাধিকারি নাজমুল হাসানের নামে বিলটি হাসপাতাল থেকে ছাড় করা হয় ১৮ মার্চ। অর্থ প্রাপ্তির জন্য ওই দিনই উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে ভাউচারটি দাখিল করানো হয় হাসপাতালের পিয়ন তুহিন শেখকে দিয়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়- যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য খুব গোপনে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি ‘কোটেশন বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয় চলতি মাসের ৩ তারিখে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরদিন ৪ মার্চ এই কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘কোটেশন কমিটি গঠন’ এবং ৫ মার্চ ‘সার্বে বোর্ড’ গঠন করা হয়। তুলনামূলক বিবরণীতে ১৭ টি ক্যাটাগড়িতে যন্ত্রপাতি মেরামত ব্যয় ধরা হয় ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৯১ টাকা। ১১ মার্চ দুপুরে তুলনামূলক বিবরণী কমিটির সভা দেখিয়ে সিংড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক এন্টারপ্রাইজকে মেরামতের কাজটি দেওয়া হয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী নাজমুল হাসান কাজটি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

বিল-ভাউচার ঘেঁটে দেখা যায়- ১১ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়ার পর থেকে মাত্র ৬ দিনে ১৭ টি ক্যাটাগড়ির যন্ত্রপাতি মেরামত কাজ সম্পাদনের কথা কাগজে কলমে বলা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত তারিখ বিহীন একটি কোটেশন বিলও দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কোনো যন্ত্রপাতি মেরামতের তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ ১৮ মার্চ টাকা উত্তোলনের জন্য বিল-ভাউচার দাখিল করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতলের পিয়ন তুহিন শেখ বলেন- মেরামতের কাজের জন্য ‘কোটেশন বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ থেকে শুরু করে হিসাব রক্ষণ অফিসে বিল-ভাউচার দাখিল পর্যন্ত নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। বরং স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলামের নির্দেশে তিনি ১৮ মার্চ তুলনামূলক বিবরণী কমিটির সদস্যদের অফিসে গিয়ে স্বাক্ষরগুলো সংগ্রহ করেছেন।

তিনি আরোও বলেন- বিলটি পাসের পর হিসাব রক্ষণ অফিসের অডিটর নাজমুল হাসান তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় অডিটর, সুপার ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে পাস হওয়া বিলটি আটকে দেওয়া হয়। পরে তিনি সাংবাদকর্মীদের সহযোগীতা নিলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজের স্বাক্ষর জাল দাবি করে তার ওপর ভূয়া বিলের দায় চাপাচ্ছেন।  

তলনামূলক বিবরণী কমিটির সদস্য চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান, চিকিৎসক রাজিব হোসেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ও হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুজাউদ্দৌলা বলেন- স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুজাহিদুলের নির্দেশ মতো তারা বিবরণী তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন। এনিয়ে হাসপাতলে কোনো আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন- তার স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া বিল দাখিল করেছেন পিয়ন তুহিন শেখ।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর