ধান আবাদ করিয়া আর লাভ নাই। জমি ফির ফ্যালেও রাখা যায় না, খাওয়ার জন্যও ধান নাগে অগত্যা আবাদ করি- কথা খান কইছেন কৃষক আবু।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পুরোদমে চলছে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন কাজ। মৃদু ও মাঝারি শৈতপ্রবাহের ধকল কাটিয়ে বর্তমানে কৃষাণ-কৃষাণী আর কৃষি শ্রমিকের পদচারণায় মুখরিত ফসলের মাঠ। ফসলি জমিতে উৎপাদনের নেশায় মত্ত কৃষকের ব্যস্ততা সারাদিন।
শত ব্যস্ততার মাঝেও কৃষকরা কষছেন চাষাবাদে আয় ব্যয়ের হিসাব। তাদের হিসাবে এ বছর বোরো ধান চাষে ব্যয় বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা এরই মধ্যে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন। ধানের চারার কোন সংকট নেই। কৃষকরাও ধান চাষে যথেষ্ট আগ্রহী। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন কিংবা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি প্রণোদনায় বিনামূল্যে সার ও বীজ পেয়ে চাষাবাদের খরচ কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কয়েকজন কৃষক। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও সুজাউদ্দৌলাহ বলেন, গত মৌসুমের চেয়ে এবারে বোরো ধান আবাদ করতে বেশি খরচ হচ্ছে। গতবার জমি চাষ দিতে খরচ হয়েছিল ৮০০ টাকা।
এবারে দিতে হচ্ছে ১২০০ টাকা। মই দিতে খরচ হয়েছিল ২৫০ টাকা, এবারে ৩০০ টাকা। শ্রমিকরাও বেশি মজুরি নিচ্ছে। এত খরচে আবাদ করে লাভবান হতে পারবেন কি না দ্বিধায় ভুগছেন তারা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পানিমাছ কুটি গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক বলেন, ধানবীজ, সার, কীটনাশকের দাম বেড়েছে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সারের বস্তা গত বছরের চেয়ে দুই থেকে আড়াইশ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সেচ পাম্প মালিকরা সেচ ভাড়াও বাড়িয়েছে। গত বছর এক বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা।
এবার বিঘাপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়তি খরচ গুণতে হবে। এদিকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে কৃষি শ্রমিকরা মজুরি বাড়িয়েছেন। পাওয়ার টিলারের যন্ত্রপাতির দাম ও চালকের মজুরি বেড়েছে। তাই গত বছরের তুলনায় এবার জমি চাষে বেশি টাকা নিতে হচ্ছে বলছেন টিলার মালিকরা। আর বিদ্যুৎ বিল বাড়ার কারণে সেচ ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেচপাম্প মালিকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলার ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে ধানবীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলায় চাষিদের চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে।
এরপরেও কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বোরো ধান চাষে ব্যয় কমাতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, লাইন, লোগো করে ধানের চারা রোপণ এবং খেতে পার্চিং করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পাভেল মিয়া / এম এ