মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের ডোবাগাঁও বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক (কৃষি) ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী কৃষক লীগের সদস্য সচিব মো. হেলাল মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সূত্রের বরাতে জানা যায়, মো. হেলাল মিয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪ নং সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের ডোবাগাঁও বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক পদে কর্মরত থাকার পরও বছরের পর বছর মাদ্রাসায় কোন ক্লাস করছেন না। মাদ্রাসার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাকে চেনেনও না। কখনো ক্লাসেও দেখেনি শিক্ষার্থীরা। কয়েক বছর ধরে তিনি মনের ইচ্ছে মত মাদ্রাসায় মাঝেমধ্যে আসা-যাওয়া করেন। তার ইনডেক্স নম্বর-২০২৮৩৭৪। অথচ শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি শতভাগ।
জানা যায়, মো. হেলাল মিয়ার সঙ্গে সদ্য সাবেক আওয়ামী পন্থীর কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদের সখ্যতার সম্পর্কের সুবাদে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েও মাদ্রাসায় ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছেন বছরের পর বছর। তার এ বিষয়টি ‘ওপেন-সিক্রেট’ হলেও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্ষমতার প্রভাবে মাদ্রাসায় শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ না নিয়েই মাস শেষে দৈনিক হাজিরা খাতায় একসঙ্গে স্বাক্ষর করে কেন মাসের পর মাস ঠিকই বেতন-ভাতাদিসহ সকল সুবিধার অর্থ উত্তোলন করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডোবাগাঁও বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সদ্য বিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেখে আসছি শিক্ষক হেলাল মিয়া মাদ্রাসায় কোন ক্লাস না করিয়েও নিয়মিত বেতনভাতা তুলে চলেছেন।
আমার দায়িত্বের আগের সভাপতির সময়েও তিনি এভাবে ক্লাস না করিয়েই বেতনভাতা নিয়েছেন। আমি দায়িত্বলাভের পর একবার নয়, বার বার সুপারকে বলেছি ক্লাস না করিয়ে এভাবে বেতনভাতা দেয়া ঠিক না। এত বছর এ বিষয়ে বলার মতো সাহস কারও ছিল না।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বর্ধন বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। এরআগে আমার কার্যালয়ের একাডেমিক সুপারভাইজারকেও মাদ্রাসায় পাঠিয়েছি। তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে আমাদের কিছু জানায়নি।’ মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা, নিয়মিত বেতন তোলা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে অন্য শিক্ষক নিয়োগ-দেয়া এসব নিয়মবহির্ভূত-বেআইনি। যদি তদন্ত করে প্রমাণিত হয় তাহলে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ডোবাগাঁও মাদ্রাসা সদ্য গঠিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আবু তালেব বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আজই আমি মাদ্রাসায় যাবো, তদন্ত করবো এবং বোর্ডে আলাপ করবো। এ বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিমির বনিক/এমএ