শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
spot_img

নারায়ণগঞ্জ সদর এবং বন্দর উপজেলা নির্বাচন, বন্দরে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

হাসান আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ শেষ না হতেই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়।

এরই মধ্যে আগামী মে মাসে চারটি ধাপে দেশের মোট ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৩৪৪টি উপজেলা পরিষদের তালিকা তুলে ধরে কোন উপজেলায় কখন নির্বাচন হবে তা জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। যার মধ্যে ৪ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ১০৮টি, ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১২১টি, ১৮ মে তৃতীয় ধাপে ৭৭ টি এবং ২৫ মে চতুর্থ ধাপে ৩৮টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সেই তালিকা অনুযায়ী প্রথম দুই ধাপে নারায়ণগঞ্জের ৫ টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। যার প্রথম ধাপে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর এবং বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। একদিকে মামলার জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সদর বাসিন্দাদের মধ্যে একধরণের উৎসব আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অপরদিকে সদর সংলগ্ন এলাকা বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিবারের মতো এবারও বহু প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদের জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টির একাধিক ব্যক্তি চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলে আলোচনায় ছিলেন। তবে শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এমএ রশিদ।

তবে এবার আর সেই সুযোগের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বন্দরের একাধিক সূত্র। বিশেষ করে সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় নির্বাচনসহ এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির সিদ্ধান্তে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রানবন্ত করে তোলার প্রচেষ্টা হিসেবে যখন দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। তখন সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে মাঠে নামছেন আগে অংশগ্রহণ করা একাধিক প্রার্থী ছাড়াও নতুন নতুন অনেক প্রার্থী।

এবারের নির্বাচনের বিশেষত্ব হলো এই নির্বাচনে চেয়াম্যান পদের তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে হাফ ডজনেরও বেশি ওসমান পরিবারের ভক্ত ও সমর্থক বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ইচ্ছুক কিংবা এই পদে দেখতে চাওয়া প্রার্থী হিসেবে যাদের নামে ব্যানার ফেস্টুন ঝুলছে তাদের মধ্যে আছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এমএ রশিদ, শ্রমিক নেতা ও বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এমএ সালাম, জাতীয় পার্টি নেতা ও মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ আহমেদ, জাতীয় পার্টি নেতা ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান ও সাবেক বিএনপি নেতা ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের নাম উল্লেখযোগ্য।

এর বাইরেও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন কবির মৃধা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহর সানুর নাম উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির অর্থাৎ ভিন্ন দলের হলেও তারা সবাই নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে দলীয় কোন প্রতীক না থাকায় একটি উন্মুক্ত নির্বাচন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানের একটি বড় সংখ্যক ভক্ত ও সমর্থক রয়েছে। যা সাবেক এমপি একেএম নাসিম ওসমানের (প্রয়াত) আমল থেকেই গড়ে উঠেছে। অনেকেই আবার শীতলক্ষ্যা নদীর এই পূর্ব অঞ্চলকে নদীর পশ্চিম এলাকার (শহর ও সদর) চেয়েও বেশি জনপ্রিয় বলে মন্তব্য করেন।

তাই নির্বাচন আসলে বন্দরের প্রার্থীদের মধ্যে ওসমান পরিবারের কে বেশি প্রিয় সেই বিষয়টি প্রকাশ্যে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তবে এবার অনেকেই ধারণা করছেন এবারের নির্বাচনকে প্রাণবন্ত করতে হয়তো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা মোতাবেক ওসমান পরিবারও এই নির্বাচনকে উন্মুক্ত হিসেবে ছেড়ে দিবেন। যেহেতু এখানে তাদের ভক্তের সংখ্যাই বেশি, তাই ভক্তদের মধ্যে তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া কে সফলতার ছোঁয়া পান তা হয়তো বাজিয়ে দেখবেন তারা।

তবে বেশিরভাগ ভক্তই আবার ওসমান পরিবারের সমর্থন ছাড়া নির্বাচন হওয়ার বিষয়টাকে কোন অবস্থাতেই সম্ভব না বলে মনে করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কারা কারা নির্বাচনের মাঠে থাকছেন, কে ওসমান পরিবারের সমর্থন পাচ্ছেন, কিংবা ওসমান পরিবার কাউকে সমর্থন দিচ্ছে কি না, সর্বোপরি নির্বাচনের শেষ পরিস্থিতি এবং সাফল্যের নায়ককে দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময় পর্যন্ত।

উল্লেখ্য ২০১৯ সালে ১৮ জুন ৫ম ধাপে বন্দর উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমএ সালামের নাম ছিল। একই তালিকায় জাতীয়পার্টি থেকে আলোচনায় ছিলেন কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান ও বন্দর ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের নাম।

আলোচনায় তখনকার সদ্য সাবেক হওয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান পরিবারে স্নেহভাজন ও তৎকালীন বিএনপি নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আতাউর রহমান মুকুলের নামও। তবে শেষ মুহুর্তে সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া সকল নেতাই ওসমান পরিবারের বিশ্বস্ত এবং স্নেহধন্য প্রার্থী এমএ রশিদকে সমর্থন দিয়ে তাদের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে থেকে সরে আসে।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর