বিশেষ প্রতিনিধি: ‘এতবড় একজন ফ্যাসিস্ট শাসক, যে পনের বছরেরও বেশি সময় জাতির উপরে জগদ্দল পাথরের মত বসেছিল, তাদের সরানো সম্ভব হয়েছে। এবং সেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার প্রভুর দেশ ভারতে পালিয়ে গেছে। আজকে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে বা পালাতে বাধ্য করা হয়েছে। এর মূল কৃতিত্ব অবশ্যই এই জুলাই বিপ্লবের- যে ভ্যানগার্ড ছিল, বাংলাদেশের তরুণ ছাত্র-জনতা। তাদেরকে আমি সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই।’
আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দিনব্যাপী মানারাত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত চতুর্থ মিডিয়া অলিম্পিয়াডের গ্রান্ড ফাইনালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
তারুণ্যের কাছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ উল্লেখ করে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হবে ‘আমার দেশ’। যেখানে থাকবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনার বহিঃপ্রকাশ। পত্রিকাটি আগের মতোই কথা বলবে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে’।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই পরাজয় ভারত যে সহজে মেনে নেবে না তার প্রমাণ প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছে দেশবাসী’।
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের অনুসারীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে, তাই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’।
মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান রফিকুজ্জামান রুম্মানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, রেজিস্ট্রার ড. মোয়াজ্জম হোসেন, সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
দেশের মূলধারার গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করে আমার দেশের সম্পাদক বলেন, ‘পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামোফোবিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করছে দেশের গণমাধ্যম। ইসকন ইস্যুতে দেশের মূলধারার মিডিয়া ছাড়াও বিবিসি ও রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম একপেশে এবং বিভ্রান্তিকর শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করছে। পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমে উদ্ভট ও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করলেও দেশের মিডিয়া হাউজগুলো তার প্রতিবাদ করেনি। কারণ স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। যে কারণে যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার দেশের মতো স্বতন্ত্র মিডিয়া হাউজগুলোকে টিকে থাকতে দেয়া হয়নি’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মিডিয়া অলিম্পিয়াডে প্রায় দুই হাজার উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অনলাইনে পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষার জন্য পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। পরে তাদের মধ্যে সেরা বিশজন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্য অতিথিরা।
অলিম্পিয়াডে বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়া অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়া প্রত্যেক প্রতিযোগীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গিফট প্যাক প্রদান করা হয়। প্রতিযোগীদের যাতায়াতের জন্য ঢাকাসহ আশেপাশের রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সার্ভিস ফ্রী করে দেওয়া হয়। মিডিয়া অলিম্পিয়াড উপলক্ষে রং বেরঙয়ের ফেস্টুন, ব্যানার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাসহ পুরো ক্যাম্পাস এলাকাকে সাজানো হয়। এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল নাঈম/এমএ