মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪
spot_img

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউল ও লোকগানের কর্মশালা

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ‘বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বাউল ও লোকশিল্পী’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দুইদিনব্যাপী বাউল ও লোকগানের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থা।

বাউল শিল্পকে বাঙালির নিজস্ব শিল্প বর্ণনা করে উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বাউল আমাদের নিজস্ব। আজকে পাশ্চাত্য যে অভিঘাত এই অভিঘাত থেকে বাউল সাধকরা আমাদের মুক্তি দিতে পারে। তারা কিন্তু অন্যকিছু চান না। তাদের যে দর্শন এই দর্শনকে দেখবার জন্য, উপলব্ধি করবার জন্য বিদেশ থেকে লোক আসছে। এই বাউল আমাদের নিজস্ব সম্পদ। যে সম্পদ দিয়ে আমরা সার বিশ্বে পরিচিত হতে পারি।
মিউজিক থেরাপিকে পৃথিবীর অন্যতম মহোষৌধ বর্ণনা করে তিনি বলেন, অনেকে মন্তব্য করেন যে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে ঘুম পায়। আমার কথা হচ্ছে যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে যদি ঘুম আসে তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আর নেই। প্রত্যেকটা হাসপাতালের উচিত চিকিৎসাপত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখে দেওয়া। যেন বড় বড় অপারেশনের পরে ঘুমের ওষুধ না লিখে রবীন্দ্রসঙ্গীতে কথা লিখে দেন। কেননা রবীন্দ্রনাথ যদি গান লিখে কাউকে ঘুম পাড়াতে পারেন তাহলে পৃথিবীতে এর থেকে মহোষৌধ আর কিছু হতে পারে না।

সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় সহায়তা বৃদ্ধির তাগিদ জানিয়ে ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, সঙ্গীত আমাদের যেমন মানসিক স্থিতি দেয় তার পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও উচিত আমাদের সঙ্গীত চর্চায় যারা যুক্ত তাদেরকে আর্থিকভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করা। বেশি দরকার নেই বরং শিল্পীরা যাতে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারেন, এইটুকু যদি করা হয় তাহলেই হবে। এই যে চারদিকে এত সংকটের কথা আমরা বলছি এই সংকট এই সঙ্গীত শিল্পীরাই দাঁড় করিয়ে ফেলবে। আমরা যদি প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একশজন করে সঙ্গীত শিল্পী দাঁড় করাতে পারি তাহলে বাংলাদেশ রক্ষা করার জন্য এরাই যথেষ্ঠ। আরকোন বিরুদ্ধমত এদেশে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এটি আমরা করতে পারছি না। যদিও এটাই আমাদের করা উচিত।

শিল্পীদের নূন্যতম চাকরির নিশ্চয়তা থাকা দরকার; সরকারি চাকরীতে শিল্পীদের জায়গা থাকা দরকার; স্কুল কলেজগুলোতে তাদের জায়গা থাকা দরকার, যোগ করেন তিনি। সঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সুশান্ত কুমার সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুশাররাত শবনম। মুখ্য আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর।

মুখ্য আলোচনায় মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলা সঙ্গীতের স্কেলেটন হলো বাউল গান। বাউল গানের ওপর ভিত্তি করে আমাদের সঙ্গীত বিশ্বব্যাপী মর্যাদা অর্জন করেছে। এই বাউল গানকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। বাউল গানের দর্শন বোঝার জন্য বিদেশিরা এদেশে এসে সংসার পেতেছেন এমনও আমরা দেখেছি। এই গানের চর্চাকে আমাদের আরও বিকশিত করতে হবে।

কর্মশালায় মুখ্য প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থার সভাপতি বাউল শফি মন্ডল। গানের দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন সঙ্গীত বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জাহিদুল কবীর, লেখক-গবেষক রুবেল সাইদুল আলম ও মো. তাজউদ্দিন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সরদার হীরক রাজা। এসময় সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বাউল গানের ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। দুইদিনব্যাপী কর্মশালর সমাপ্তি হবে মঙ্গলবার।

মোঃ সাইফুল ইসলাম/এস আই আর

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর