জাবি প্রতিনিধি: ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবীদের সরকার ব্যতীত জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ৫ আগস্ট সাভারে নিহত শহিদ আসহাবুল ইয়ামিনের পিতা মো. মহিউদ্দিন।
আজ রবিবার (১২ জানুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান ও স্মৃতিচারণকালে তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।
শহিদ আসহাবুল ইয়ামিনের পিতা মো. মহিউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, “যারা বিপ্লবকে ধারণ করে তারাই এ দেশকে আবারো মুক্ত করতে পারবে। কোনো স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী, ভারতের দালাল গোষ্ঠীর হাতে এ দেশ নিরাপদ নয় সেটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। তাই বিপ্লবীদের নিয়ে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে হবে। বিপ্লবীদের সরকার ব্যতীত জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্ভব নয়।”
এসময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সমালোচনা করে বলেন, “গভর্নর বলেছেন তারা পাচারের ৮০ শতাংশ টাকা ফেরত এনেছেন। যদি ফেরত এনে থাকেন তাহলে নিম্নবিত্ত মানুষের রুটিরুজির উপর কেন কর আরোপ হয়েছে? পাচার ফেরত টাকায় কেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়েনি? সেই টাকা কোথায় আমরা জানতে চাই। বিগত সরকারের দোসররা ক্যান্টনমেন্ট ও বাসাবাড়িতে হত্যাকারীদের আশ্রয় দিয়ে নিরাপদে সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কিছুই জানেন না, যা আমাদেরকে হতাশ করছে।”
এ সময় শহিদ শ্রাবণ গাজীর পিতা বলেন, “যে লক্ষ্যে আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে জুলাই আন্দোলনে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, শহিদ পরিবারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। শহিদ পরিবারকে অর্থায়ন করার আগে আহতদের দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।”
উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আমাদের শহিদ ইয়ামিন ও শ্রাবণ গাজীর পিতা যে আফসোস, হতাশার ও দুঃখের কথা বলেছেন তাতে আমাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ এ লাখো শহিদগণ যে লক্ষ্যে রক্ত দিয়েছে তা বাস্তবায়িত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত সব নাটক, কবিতা ও উপন্যাস ব্যর্থ হয়েছে। পরবর্তীতে ৯০’র গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারকে বিদায় করেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ফলশ্রুতিতে ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ আমাদেরকে চেপে ধরেছে। এই কারণে ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে ২ হাজার ছাত্রজনতাকে জীবন দিতে হয়েছে। বিপ্লবোত্তর সারা দেশে যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা যেন জাহাঙ্গীরনগরে না হয় এজন্য সকলের সহযোগিতা চাই। আজ আমি অঙ্গীকার করতে চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না, কোনো ধরনের বৈষম্য সহ্য করা হবে না। ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভক্তির ফলে বিগত দুইটি সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। আপনারা বিপ্লবকে ধারণ না করলেও বিরোধিতা করবেন না। চলুন আমরা জাহাঙ্গীরনগর থেকে ঘোষণা করি ২৪’র বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দিব না। যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে তাতে আমার জীবন গেলেও তাতে পরোয়া করি না। আমি জাহাঙ্গীরনগরের স্বার্থের বিপরীতে অন্য কোনো স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে চাই না, দিব না। যেদিন দিতে হবে সেদিন বিদায় নেব, এটি আমার গল্প নয় বক্তব্য নয় বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিব।”
মোঃ আরিফ হোসেন/এমএ