শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
spot_img

ছাত্রদলসহ ২৮ সংগঠনের সভা, যে কারণে ডাকা হয়নি শিবির ও বৈষম্যবিরোধীদের

দেশের চলমান ইস্যু, ভারতীয় আগ্রাসন ও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিসহ একাধিক বিষয়ে মতবিনিময় করেছে ২৮টি ছাত্র সংগঠন। তবে এই সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরকে রাখা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাঁটাবনের একটি হোটেলে সংগঠনগুলোর নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। যদিও এটিকে নেতারা রুটিন বৈঠক বলছেন। তবে জানা গেছে, মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। ওই বৈঠকে সব ছাত্র সংগঠনকে না ডাকায় আলাদা একত্রিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির ২০ জনের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। এর পরদিন, অর্থাৎ বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রসংগঠনগুলোকে বৈঠকে ডাকে। শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সেই বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে না ডাকায় সেই বৈঠকে ছাত্রদল, ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট যায়নি। ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধীরা তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিচ্ছে না। প্রয়োজন হলেই কেবল ডাকে। প্রয়োজন শেষে আর খোঁজ নেয় না। আগে থেকেই বাম সংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে। তাদের অনেকে শিবিরকে পছন্দ করে না। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগের সভায় জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল করে সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল ছাত্র ফেডারেশন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেই প্রস্তাব বৈষম্যবিরোধীরা রাখতে পারেনি।

অন্যদিকে এত দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে নয় ছাত্রদল। ফলে কাঁটাবনে বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রত্যেক সংগঠনই এর পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য একত্রিত হয়েছিল। তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া অনেক সংগঠনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায়ও গেছে। এর ফলে কোনো বিষয়েই নীতিগত সিদ্ধান্তে যাওয়ার মতো আলোচনা হয়নি বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।

তবে বৈঠকে গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার এবং আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে থাকার বিষয়ে সংগঠনগুলো ঐক্যমতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু রাখা, ছাত্রসংসদ নির্বাচন, ৫ আগস্টের পর জাতীয় রাজনীতির হালচাল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্মে আমরা সবগুলো ছাত্রসংগঠন ছিলাম। ৫ আগস্টের পর তারা অঙ্গীকার করেছিল, সব ছাত্র সংগঠনগুলোর পরামর্শ নিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেব। অথচ, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈষম্যবিরোধীরা ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চা থেকে সরে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল, সেখানে এক ধরনের ফাটল ধরেছে। তার দায় কোনোভাবেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এড়াতে পারে না। আমরা দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের কথা বলেছি। আমরা মনে করছি, ছাত্রসংসদ না থাকার কারণে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরছে না।

একই কথা বলেছেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। তিনি বলেন, আমরা চাই, অতি দ্রুত ডাকসু নির্বাচন হয়ে যাক।

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমরাও একটা মত দিয়েছি যে, তাড়াহুড়ো করে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিলে তা কার্যকর হবে না।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এখন যেহেতু ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক সময়। ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের বোঝার সময় দিতে হবে। কোন ছাত্রসংগঠন ভালো কোনটা মন্দ। সে সময়টুকু নিশ্চিত করে ছাত্রসংসদ নির্বাচন দেওয়ার কথা আমরা বলেছি।

ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আহ্বান না করার বিষয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বসব। এখন যেহেতু তারা রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন না, তাই তাদেরকে বলা হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও সামনে আহ্বান করা হবে। ছাত্রশিবিরের বিষয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। সেকারণে তাদেরকে আমরা এ পর্বে আমন্ত্রণ জানাইনি।

বৈঠকে আরও অংশ নিয়েছে- ছাত্র আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাফর), জাগপা ছাত্রলীগ (প্রধান) বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, ভাষানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, ছাত্র অধিকার পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজ (পার্থ), ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ, রাষ্ট্রসংস্কার ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্রলীগ (নুর আলম), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।

এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ ও মার্ক্সবাদী), ছাত্রফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন অংশ নিয়েছে।

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর