সোমবার, মে ২০, ২০২৪
spot_img

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ চান সবাই

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। আগামী ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন নিয়ে প্রথমে দুটি পৃথক তপশিল ঘোষণা করে দুটি পক্ষ। কিন্তু একটি পক্ষ সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এখন সবাই বর্তমান সমিতির পক্ষ থেকে ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল সমর্থক আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে সমিতিতে যে কলঙ্কজনক অধ্যায় তৈরি হয়, সেই কলঙ্ক মুছে ফেলার জন্যই এই হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমিতির পক্ষ থেকে ২০২৪-২৫ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। তপশিল অনুযায়ী ৬ ও ৭ মার্চ ভোট গ্রহণের দিন রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সমিতির নেতৃত্বদানকারী কমিটিকে অবৈধ দাবি করে গঠিত সমিতির এডহক কমিটির পক্ষ থেকে আরও একটি তপশিল ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমিতিতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। এ অবস্থায় এডহক কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আর সমিতি তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সমিতি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সমর্থক ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের প্যানেল তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এবার বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর ও সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুসসহ ১৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এই দুই প্যানেলের বাইরেও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ নাহিদ সুলতানা যূথী। এরই মধ্যে সমিতির পক্ষ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে আহ্বায়ক করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জমে উঠছে নির্বাচন।

জানতে চাওয়া হলে সমিতির বর্তমান সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল বলেছেন, সমিতির তপশিল অনুযায়ী নির্বাচন ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা নিরপেক্ষ সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমিতির নির্বাচন যেভাবে হয়, সেভাবেই এবারও নির্বাচন হবে। এদিকে সমিতির এডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল বলেছেন, এডহক কমিটির কাজ হচ্ছে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করা। সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক, আমরা সেটা চাই। সে কারণে যখন দেখলাম সমিতিও একটি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে, তখন আমরা চুপ হয়ে গেছি। এখন আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন না হলে একটা বড় শূন্যতার তৈরি হবে, সে কারণে মনে করি একটা নির্বাচন হোক। আর সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে এডহক কমিটি ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ওপর চাপ তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, আমি প্রত্যাশা করব নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি (সাব-কমিটি) যেন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করে। নির্বাচনে যে ব্যক্তিই জিতুক না কেন, এবার কোনো অনিয়ম যেন না হয়। বিগত দুটি নির্বাচনে যে কলঙ্ক সমিতির গায়ে লেগেছে, তা যেন দূর হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী হলো জাতির বিবেক। এই সমিতির ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। তাই পেছনে যা হয়েছে তা যেন আর না হয়। সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সে ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে আমি আশা করি।

সমিতির বিএনপি সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস বলেন, সমিতির অধীনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এবারও কাটেনি। যে সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাতে দুজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখা হয়েছে, যারা গত বিতর্কিত নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছিল। যে কারণে এই সাব-কমিটি ভোট চুরির আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে আমি মনে করি। তবুও আমরা নির্বাচনে আছি। আমরা সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সমিতিতে নির্বাচনের সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। আশা করব নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিগত দিনের নির্বাচন নিয়ে ভালো-মন্দ যেটাই বলা হয় হোক, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা সুন্দর আলোকিত দিনের প্রত্যাশা করি।’ তিনি আরও বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির মতো একটা সংগঠনকে কখনো হাইপ্রোফাইল পলিটিক্সে জড়িত হওয়া ঠিক না। কারণ এটা একটা পেশাদার সংগঠন। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের সংগঠন না। কিন্তু আমাদের পেশাজীবীরাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ সাদা, কেউ লাল ইত্যাদি ব্যানারে কাজ করলেও এটা পলিটিক্স। তবে, এখানে যারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের পক্ষ থেকে বলতে পারি, নির্বাচন কমিশন শতভাগ সুষ্ঠু ভোট করতে চায়। এ ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সমিতির নির্বাচন পরিচালনা সাব-কমিটি গঠন নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে সমিতির আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক এবং সমমনা আইনজীবীরা। পরে সমিতির আওয়ামী ফোরামের নেতারা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি ঘোষণা করেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থকরা সমিতির সাবেক সহসভাপতি এ এস এম মোক্তার কবিরকে প্রধান করে একটি নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন করেন। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ১৫ মার্চ সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর উদ্যোগ নিলে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির সঙ্গে বিবাদে জড়ান। একপর্যায়ে সমিতির মিলনায়তনে কয়েকশ পুলিশ প্রবেশ করে। তারা বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করতে লাঠিচার্জ শুরু করলে প্রায় ১৫ জন আইনজীবী এবং ১০-১২ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। পরে একতরফা ভোটে আওয়ামী লীগ সমর্থক ১৪ প্রার্থীই বিজয়ী হন।

এর আগে ২০২২ সালেও ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণার মুহূর্তে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা সম্পাদক পদে ভোট পুনর্গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে হৈচৈ-হট্টগোলের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামান পদত্যাগ করেন। ফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। প্রায় দেড় মাসেও এ জটিলতার নিরসন না হওয়ায় একই বছরের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ব্যালট রাখা কক্ষ ভেঙে পুলিশ পাহারায় তা গণনা করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেন।

এসএ

- Advertisement -spot_img

রাজনীতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আবেদন করতে ব্যানারে ক্লিক করুন...spot_img

সর্বশেষ সব খবর