গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: শারীরিক নির্যাতনের পর প্রতিবেশির দেওয়া ভর্ৎসনা। সবশেষ সম্ভ্রম রক্ষায় আত্মহত্যা করেছেন সাজেদা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূ। গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের খাঁকড়াদহ গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাটি ঘটে। রাতেই লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশি ভাশুর মজনু রহমান বেশ কিছুদিন ধরে দুই সন্তানের জননী সাজেদা বেগমকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি ছিলেন গৃহবধূ সাজেদা। সুযোগ পেলেই হামলে পরার চেষ্টা করতেন লম্পট মজনু। পরকীয়ায় ব্যার্থ হয়ে বুধবার রাতে গৃহবধূ সাজেদা বেগমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ছিনিয়ে নেন মোবাইল ফোন। বদনাম রটিয়ে দেন গ্রামে। গৃহবধু সাজেদা বেগম খাঁকড়াদাহ গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে প্রবাসী সুজনের স্ত্রী।
নিহতের শ্বাশুড়ী সূর্য্য বেগম বলেন, নাতি-নাতনি, পুত্রবধূ ও ছেলে সুজন ইসলামকে নিয়ে তার সংসার। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলা ফেরাতে মাস ছয়েক আগে মালয়েশিয়া যান তার ছেলে সুজন। দুই কক্ষের টিনের বাড়ির এককক্ষে তিনি নিজে এবং অপরটিতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সজিলা খাতুন (১৪) ও ৫ বছর বয়সি ছেলে হুসাইনকে নিয়ে থাকতেন পুত্রবধূ সাজেদা। ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে বাড়িতে এসে তার পূত্রবধুর দড়জায় কড়া নাড়তেন প্রতিবেশি মজনু। দিতেন কুপ্রস্তাব। কিন্তু সম্মানের ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে পারেননি তারা।
নিহতের কন্যা সজিলা খাতুন (১৪) জানায়, সে আর তার ভাই হুসাইন (৫) মায়ের সাথেই থাকতো। বুধবার রাতে মজনু, ওহাবসহ বেশকয়েকজন তাদের বাড়িতে এসে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর শুরু করেন। তার মায়ের নামে নানা ধরণের বদনাম দিতে থাকেন। নিজের আত্মসম্মান আর সম্ভ্রম রক্ষায় বৃহস্পতিবার সকালে গ্যাস ট্যাবলেট খান তার মা সাজেদা। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়। মা হারিয়ে তারা দুই ভাইবোন এখন এতিম। ভর্ৎসনাকারি মজনুসহ অন্যদের বিচার দাবি তার।
প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন মজনু, তার স্ত্রী শেফালি ও শ্যালক ওহাব। মজনু একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। এরআগেও বিভিন্ন নারীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মজনুর বিরুদ্ধে। মজনু বাড়িতে না থাকলেও তার পুত্রবধূ ইতি জানান, শারীরিক নির্যাতন বা ভর্ৎসনার সাথে তার শ্বশুড় জড়িত কিনা তা তিনি জানেন না। তবে তারা স্বপরিবারেই প্রতিবেশি সাজেদার বাড়িতে যাতায়াত করতেন।
প্রবাস থেকে মোবাইল ফোনে নিহত সাজেদার স্বামী সুজন বলেন, বুধবার রাতে প্রতিবেশি মজনুসহ বেশ কয়েকজন তার স্ত্রীর নামে নানা ধরণের অপবাদ দেন। স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন। মূলত মজনুই তার স্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। তিনি মজনুর বিচার দাবি করেন।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন,গৃহবধূ সাজেদার আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের স্বজনদের মধ্যে কেউ মামলা দায়ের করলে তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করা হবে।
মো. সোহাগ আরেফিন/এমএ