মেহেদী হাসান মিরাজে, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৪ ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ডে গ্রামপুলিশ শূন্য পদে নিজ যোগ্যতা,মেধায় ও বিনা পয়সায় চাকুরী পেলেন ৭ তরুণ তরুণী। গ্রাম পুলিশের চাকুরী যারা পেলেন তাদের কোন প্রকার খরচ কিংবা তদবির ছাড়াই নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়েছেন৷ এবং তারা সবাই নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা৷
সোমবার রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি আনুষ্ঠানিক ভাবে নিয়োগ পরীক্ষার সকল প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন।
এতে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে নিয়োগ পেয়েছেন একই ইউনিয়নের চতুরাগছ এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. সয়ন, পাগলীডাঙ্গী এলাকার তফিল হোসেনের ছেলে হাবিবুল্লাহ। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড নিয়োগ পেয়েছেন সিদ্দিক নগর এলাকার ফরমান আলীর স্ত্রী রানী পারভীন৷ বুড়াবুড়হ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে নিয়োগ পেয়েছেন চৌধুরীপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলামের ছেলে সাহালম হোসেন, ৫ নং ওয়ার্ডে নিয়োগ পেয়েছে চরকডাঙ্গী এলাকার সেরাজুল ইসলামের ছেলে তসলিম উদ্দিন এবং ভজনপুর ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ড নিয়োগ পেয়েছেন একই ইউনিয়নের কাউরগছ এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে মো: আসাদুজ্জামান ৷
এদিকে সোমবার সকালে ৪ ইউনিয়ন থেকে আসা গ্রাম পুলিশ পদে আবেদনকারী প্রার্থীদের প্রাথমিক মেডিকেল, লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে রাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তীর্নদের নাম ঘোষণা করে নিয়োগ কমিটি৷ এসময় নিজ যোগ্যতা ও মেধায় চাকরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই সাত তরুণ তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়।
তবে উপজেলায় গ্রাম পুলিশ পদে এবারের মতো স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা ও প্রক্রিয়া আগে কখনও হয়নি বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাধারণ মানুষসহ স্থানীয় সচেতন মহল৷
এবিষয়ে কথা হয় তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রানী পারভীনের সাথে, তিনি বলেন আমি গরীব ঘরের সন্তান৷ আমাদের ইউনিয়নে একজন গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ দেয়া হবে এমন খবর পেয়ে আবেদন করি৷ পরে আবেদনের পর যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অংশ গ্রহন করে রাতে ফলাফল পাই আমি নিয়োগ পেয়েছি৷ আমি কৃতজ্ঞতা জানাই নিয়োগ কমিটির প্রতি। আমার কোন টাকা পয়সা খরচ হয়নি৷ আমাদের মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে এতে আমরা অনেক আনন্দিত৷
একই কথা বলেন ভজনপুর ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ড নিয়োগ পাওয়া আসাদুজ্জামান মঞ্জু৷ তিনি বলেন, আমরা আগে দেখে আসছি গ্রাম পুলিশের ছেলে মেয়ে কিংবা আত্মীয়রাই এই চাকুরী পেতো৷ কিন্তু আবেদন করে আজ নিজের যোগ্যতা ও মেধায় আমিও আজ গ্রাম পুলিশের চাকুরী পেলাম৷ এভাবে যদি প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করা হয় তাহলে আমাদের মতো মেধাবীদের কর্মসংস্থান হবে৷ আমার চাকরি পেতে কোন টাকা খরচ কিংবা তদবির করতে হয়নি। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেন আমার এলাকার মানুষের সেবা করতে পারি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে।
এবিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী মন্ডল বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ধরে আমার উপজেলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছি৷ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা দেখেছি কিন্তু গ্রাম পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষার মতো এত স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া আমার জীবনেও দেখিনি। তবে যারা নিজেদর মেধায় চাকুরী পেলেন তারা সবাই গরীব ঘরের সন্তান। তারা তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবে এই প্রত্যাশা করি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি জানান, গ্রাম পুলিশ পদে যারা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন তারা সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। তারা প্রথমে শারীরিক, পরে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি।